হেলাল আহমেদ দিরাই থেকে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ছে না দিরাই’র হাওরাঞ্চলের বোরো চাষিদের। ছত্রাকজনিত নেক ব্লাস্ট রোগের পর এবার ঝড়-বৃষ্টি আতঙ্কে হাজারো কৃষক রয়েছে আতঙ্কে। কারণ দিরাই’র হাওরে এখন চলছে বোরো ধান কাটার উৎসব। এরই মাঝে দুই দিন ধরে এ অঞ্চলে মাঝে-মধ্যে হালকা মাঝারি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতেই আছে। আকাশের গুমটে ভাব যেন দূর হচ্ছে না। এতে বড় ধরনের দুর্যোগের আশঙ্কায় রয়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
দিরাই’র বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হাওরে সোনালি ধানের দোলা দেখে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষকদের ঘরে ঘরে এখন নতুন ধানের উৎসব বিরাজ করছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও কৃষাণীরা। কালবৈশাখী ঝড়ের আগেই কৃষকরা তাদের কষ্টের ফসলকে ঘরে নিতে চান।
তবে গত কয়েক দিন ধরে আকাশে গুমট ভাব কৃষককে বেশ চিন্তায় ফেলেছে। তার শঙ্কায় আছেন কখন না জানি শিলা-বৃষ্টিতে তাদের সর্বনাশ ডেকে আনে।গতকাল দিরাইর ও জগন্নাথপুর উপজেলার নলোয়ার হাওরে মাঝারি মানের শিলা বৃষ্টি হয়েছে।নলোয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার ৩য় বৃহত্তম হাওর।
টাংনি হাওর পাড়ের কৃষক আজিজুর রহমান জানান, এমনিতেই এ অঞ্চলের বোরো ক্ষেতে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে পরিপক্কতা আসার আগেই ধানের থোড় শুকিয়ে চিটা ধরেছে। এতে ফলন কম হওয়ায় চলতি মৌসুমে বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পরে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব কারণে ধানের দাম আরও কমতে পারে। সর্বশেষ ধানকাটার পুরো মৌসুমে আবহাওয়ার এ লুকোচুরি খেলায় কৃষক শঙ্কিত।
নলোয়ার হাওরের কৃষক সজীব মিয়া বলেন, এবছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। ইতোমধ্যে তিন বিঘা জমির ধানকাটা হয়েছে। কাটা ধান মাঠে শুকানোর জন্য বিছানো রয়েছে। এরই মধ্যে গত রাতে ঝড়-বৃষ্টির কারণে কিছু জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলের অধিকাংশ মাঠেই চলছে ধান কাটার উৎসব। আর কয়েক দিনের মধ্যেই এসব ধান কৃষকের ঘরে উঠবে। তাই ঝড়-বৃষ্টি হলে কৃষকের ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।অপরদিকে শ্রমিক সংকট।রোজ এক মন ধানের বিনিময়ে ও লোক পাওয়া যাচ্ছেনা। আর হারভেষ্ট(ধান কাটার মেশিন)ও বিঘা প্রতি নিচ্ছে ২০০০ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা করে।
একই এলাকার কৃষক জামাল জানান, আকাশে যে মেঘের অবস্থা বিরাজ করছে তাতে করে শিলা-বৃষ্টির আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, মাঠে এখন প্রতিটি ক্ষেতেই ধান পেকে উঠেছে। তবে কৃষক না পাওয়ায় ধানকাটা সম্ভব হচ্ছে না। অধিকাংশ মাঠ ধানের শীষের পাকা সোনালি রংয়ে ছেয়ে গেছে। যেদিকে দৃষ্টি যায়, শুধু পাকা ধান আর ধান। কেউ ধান কাটছে, কেউ কাটা ধান কাধে করে নিয়ে আসছে বাড়িতে।
দিরাই কৃষি অফিস থেকে জানান, বোরো ক্ষেতে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের তেমন সমস্যা হয়নি। এতে উৎপাদনে কোন প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, দিরাই’র হাওরাঞ্চলে
সামনে বড় ধরনের ঝড়-বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক বোরো আবাদে বেশ লাভবান হবেন।