ডেস্ক রিপোর্ট ঃ
দুর্ভোগের আরেক নাম দিরাই -জগদল আঞ্চলিক সড়ক। দিরাই উপজেলা সদর থেকে জগদল যাওয়ার সড়কটি যেন হয়ে উঠেছে দুর্ভোগের আরেক নাম। কাচা-পাকা সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দক। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এই রাস্তায় চলাচলকারী অসংখ্য মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদর থেকে জগদল পর্যন্ত যাওয়ার মূল সড়কটির দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।
সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন ট্রাক, অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ ছোট বড় অনেক যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির কোনো সংস্কার না হওয়ায় মাটিয়াপুর ও জগদলের মধ্যবর্তী স্থানে পাকা রাস্তায় পিচ উঠে অসংখ্য স্থানে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। আর বৃষ্টির পানি জমে একেকটি গর্ত যেন পরিণত হয়েছে ছোট ডোবায়। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।আর কাচা রাস্তা তো দেখতে যেনো সদ্য চাষ করা জমি।
ইজিবাইক চালক সুমন, রাজন ও মটর সাইকেল চালক পপলু জানান, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলতি সময়ে দিরাই -জগদল যাওয়ার রাস্তাটির বেহাল দশা হয়েছে। এই সড়কে গাড়ি চালানো খুবই কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিনিয়তই কোন না কোন দুর্ঘটনায় পড়তে হয়।পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই রাস্তায় চলতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় যখন রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়া করতে হয়।
অথচ এই অঞ্চলের রয়েছে ঐতিহ্য,রয়েছে হাজারো সুনাম। অপরুপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ও হাওর-বাঁওড়-নদী বেষ্টিত ঐতিহ্যবাহী জনপদের নাম দিরাই । আউল-বাউল, আপন দুলাল-বিনোদের কিচ্ছা সহ অগণিত পালা-লোকগাথা-কেচ্ছা-কাহিনির স্বর্ণগর্ভা জনয়িত্রী দিরাই ।হাওর-বাঁওড়ের সৌন্দর্য ও স্থৈর্য দিরাইবাসী কে দিয়েছে ভাবের গভীরতা। আউল-বাউলের উদার মানবিকতা দিরাই কে দিয়েছে উচ্ছল প্রাণের সমৃদ্ধি।
সাহিত্য-সংস্কৃতি, চারু-কারুকলা,কৃষিতে বেশ সমৃদ্ধ অঞ্চল। বিশেষত মাটিসংলগ্ন ভাব ও ভাবনাতে এ অঞ্চলের জুড়ি মেলা ভার। তবে বর্তমান উন্নয়নসূচক—শিক্ষা, সম্পদ ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এ উপজেলা অনেক পিছিয়ে। এখানে শিল্পকারখানা নেই; নেই বড় কোনো কারবারি প্রতিষ্ঠান বা নাগরিক জীবনধারণের প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা। এখানকার যোগাযোগব্যবস্থা, বিশেষত সড়ক যোগাযোগ—এটা যেন ভূতের পথচলার মতো; সামনে নয়, দিন দিন পেছনের দিকে হেঁটে চলেছে।
দিরাই উপজেলা সদর থেকে জগদল ও করিমপুর ইউনিয়নের সড়কে বাস চলাচল করে না। কেন চলে না, এর যথাযথ কোনো উত্তর নেই। এখানকার যাতায়াতের বাহন—মোটরসাইকেল, সিএনজি,ট্রলি, অটোরিকশা ইত্যাদি। একুশ শতকে উপজেলা সদর থেকে জগদল ও করিমপুর ইউনিয়নে যেতে কি যে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়, ভুক্তভোগী ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে উপলব্ধি করা কঠিন।
গত শতকের নব্বই দশক থেকে একুশ শতকের তৃতীয় দশক—অনেকটা সময়। এর মধ্যে আমরা কত কী ক্ষেত্রে বিস্ময়করভাবে এগিয়েছি। পদ্মা সেতু তৈরি করেছি, মেট্রোরেল বানিয়েছি, মহাকাশে পাঠিয়েছি উপগ্রহ। এসব অর্জনের ভিড়ে জগদল_দিরাই আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ আমাদের যেন নিত্য পরিহাস করে চলেছে। মূল্যবৃদ্ধির যুগে আমাদের সময়ের মূল্য অভাবিতভাবে কমে যাচ্ছে। এ শোচনীয় অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো উপায় কি নেই? সত্যিই কি নেই?
আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছেন ব্যাবসায়ী দবির আহমেদ ও দলিল লেখক জাহেদ আহমেদ হেলন। দিরাই-জগদলের দূরত্ব আনুমানিক প্রায় ২০ কিলোমিটার; দূরত্ব খুব বেশি নয়, কিন্তু যাতায়াতে চরম হাঙ্গামা পোহাতে হয়।
এ অঞ্চলে একটি প্রবাদ আছে “বর্ষায় নাও হেমন্তে পাও” দিরাই থেকে হেমন্তে ট্রলি ও মটর সাইকেল, সিএনজি চড়ে করিমপুর ইউনিয়ন হয়ে জগদল, জগন্নাথপুর ও সিলেট যেতে হয়। জগন্নাথপুর থেকে চড়তে হয় নতুন যানে সিলেট যাওয়ার জন্য।
বর্ষাকালে ট্রলার, শুকনাকালে মোটরসাইকেল, সিএনজি, টেম্পো ইত্যাদি। যাতায়াতের মাধ্যম যা-ই হোক, দূরত্বের তুলনায় অর্থ এবং সময়—দুটোতেই অপচয় আর অপচয়। এ রকম যানে দুর্ঘটনা যেন স্বাভাবিক ঘটনা। বড় দুর্ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়, ছোটগুলো ‘কপালের লিখন’ হিসেবে বিস্মৃতিতে তলিয়ে যায়। পৌরসদরসহ দিরাই উপজেলায় মোট ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে।
এর মধ্যে উপজেলা সদরের সঙ্গে জগদল,করিমপুর, কুলঞ্জ,তাড়ল,ভাটিপাড়া ও সরমংগল ইউনিয়নে সরাসরি সড়ক সংযোগ নেই। রাজানগর,চরনাচর ও রফিনগর ইউনিয়নের শ্যামারচরে সঙ্গে সড়ক সংযোগ থাকলেও এ সড়কে বাস চলাচল করে না।সিএনজি’র যোগাযোগ আছে কেবল রাজানগর, চরনারচর ও শ্যামারচরের সঙ্গে। ওই সিএনজি চলাচলের হালহকিকত, সেটাও মর্মপীড়ার জন্ম দেয় শুধু।