হেলাল আহমেদ::সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বৈশাখ_জৈষ্ঠ্যের রোদে দিরাই’র হাওর-বাঁওড়, নদ-নদীর পাড়, সড়ক ও শহরের আনাচকানাচ বেড়ে ওঠা গাছে গাছে ফুটেছে জারুল ফুল। জারুলের উছলে পড়া রূপ নজর কাড়ছে সবার।দিরাই’র আনাচে কানাচে যেনো বেগুনি রং ধারন করে আছে জারুল ফুল।
কবির কবিতায় আছে, ‘এই পৃথিবীর এক স্থান আছে, সবচেয়ে সুন্দর করুণ/সেখানে সবুজ ডাঙ্গা ভরে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল/ সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল।’
দিরাই-মদনপুর সড়কের পাশে সুজানগর,শরীফপুর,নারায়নপুর,গাজিনগর,বগলাপাড়ায় এলাকায় গেলে দেখা যায় থুকা থুকা জারুল ফুলের সারি। এসব এলাকার সড়কের বিভিন্ন স্থানে জারুলগাছ ফুলের সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সবুজের মাঝে বেগুনি রঙের ওড়নার মতো দুলছে গাছের ডালগুলো। জগদল ইউনিয়নের দৌলতপুর,নগদীপুর,কাউয়াজুড়ি গ্রামে জারুল আছে অনেক,আর সেইসব গাছে প্রচুর জারুল ফুল ফুটেছে।দিরাই_শ্যামারচর সড়কের কিছু কিছু এলাকায় জারুল ফুল দেখা যায়। কথা হয় ফুলপ্রেমী আব্দুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই সড়কে জারুল ফুল দেখে আমার মন ভরে গেছে।’
শুধু দিরাই-মদনপুর সড়ক নয়, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায় জারুল ফুলের সমারোহ।
প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কোথাও একা, কোথাও দুই-তিনটি করে জারুলের বেশ কিছু গাছ আছে। সেই সব গাছে এখন বেগুনি রূপের বন্যা।
এসব গাছ কারও যত্ন–আত্তিতে বেড়ে ওঠেনি, এগুলো প্রকৃতিতে নিজের নিয়মেই বেড়ে উঠেছে। গ্রীষ্ম এলেই এসব গাছে অনেকটা সময় ধরে ফুল ফুটছে, ফুল ঝরছে। গাছের পাতা ঝরে গিয়ে আবার প্রাণ নিয়ে জেগে উঠছে।
বৃক্ষপ্রেমী জাহেদুর মিয়া জারুল ফুল সম্পর্কে বলেছেন, জারুলের পাতা লম্বা, চওড়া ও গাঢ় সবুজ। জারুল ফুলের বেগুনি রং যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি তার নমনীয় কোমল পাপড়ি শোভন-সুন্দর। ফল ডিম্বাকৃতির। ফুল ফোটার পরই শাখায় ফল ধরতে থাকে। জারুলের ফুল বর্ষা-শরৎ পর্যন্ত থাকে। জারুলের আদি আবাস চীন, মালয় ও বাংলা-ভারতের জলাভূমি।তিনি আরও বলেন,শুধু ফুলের জন্য জারুল গাছের কদর নয়,এই গাছের কাঠের অনেক দাম,বিশেষ করে হাওর ও নদী পাড়ের মানুষের কাছে।নৌকা তৈরিতে সবচেয়ে বেশি এই গাছের কাঠ ব্যাবহার করা হয়।
‘পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে জারুল বনে’—জীবনানন্দ দাশের কবিতার পঙ্ক্তির মতো ওখানে হয়তো পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকছে না, তবে থেমে থেমে দু-একটি ঘুঘুর ডাক শোনা যাচ্ছে, ডাকছে আরও কিছু পাখি।
উপজেলার পথের পাশে, খালের পাড়ে, বাড়ির সীমানায় ফুল-কুমারী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জারুলের একেকটি গাছ। খুব বেশি নয়, তারপরও এই গ্রীষ্মে নিজেদের আলাদা পরিচিতি নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে অন্য সব গাছের ভিড়ে মিলেমিশে আছে এই জারুলেরা। গাছে গাছে থোকা থোকা দুলছে জারুল ফুলের মুকুট। গাছ থেকে টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছে এসব ফুল।জারুলতলায় ঝরা ফুল বেগুনি আর সাদা, গোলাপি একপশলা চাদর হয়ে আছে।
ভাটি অঞ্চলে আগের মতো জারুল আর নেই, এটা যেমন বাস্তবতা; তেমনি এখনো অনেক ঝড়ঝাপটা, কাটাকাটির ভেতরও এই গাছ কিছু হলেও নিঃশব্দে বেঁচে আছে, টিকে আছে এই উপজেলায়।
বাড়ির আঙিনা, খালের পাড়ে, পথের পাশের প্রায় সব কটি জারুলতলায় এ রকম ফুল ঝরে পড়ছে।
স্থানীয় লোকজন(মুরুব্বীরা) জানালেন,দিরাই উপজেলার হাওরপারের বাড়িতে বাড়িতে,খালের দ্বারে পথে পথে আগে অনেক জারুল গাছ ছিল। কিন্তু এখন জারুল অনেক কমে গেছে। তারপরও এখনো বেশ কিছু জারুল গাছ আছে দিরাইয়ে।
আগে দিরাই’র বিভিন্ন হাওর, হাওরপারের বিভিন্ন স্থানে জারুলগাছের প্রাচুর্য ছিল। নির্বিচার কেটে ফেলায় এখন অনেকটা কমে গেছে।
পৌর শহরের সুজানগর গ্রামে বেতইর নদীর পাশে জারুলগাছের কয়েকটিতেও প্রথমবারের মতো থোকা থোকা জারুল ফুল ফুটেছে। এই গরমে জারুলের সৌন্দর্য এলাকার বাসিন্দাদের মনে একটু হলেও শান্তির পরশ দিচ্ছে।