শাহ্ ফুজায়েল আহমদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের অবস্থানকে জনসম্মুখে তুলে ধরতে সুনামগঞ্জ-০৩ (২২৬) (শান্তিগঞ্জ-
জগন্নাথপুর) আসনে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন পেতে ৭ প্রার্থী মাঠ পর্যায়ে প্রচারণায় রয়েছেন। দুই উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত এই আসনে প্রার্থীরা প্রতিটি প্রান্তরে তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজ নিজ কর্মী,সমর্থক ও শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে হাটে,ঘাটে, মাঠে ছুটে চলছেন নিজ উদ্যোগে।
বাজারের চায়ের স্টলগুলো ও এখন জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণায়। অজপাড়া গাঁয়ে গড়ে উঠা পয়েন্ট ও ছোট দোকানগুলো এখন আলোচনার নগরীতে। প্রতিটি প্রার্থীদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা নিজেদের স্বপক্ষের প্রার্থীর গুনগানের লড়াইয়ে সমবেত। আলোচনার ফাঁকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভোটের হিসাব,এলাকা বন্টনে কোথায় কে এগিয়ে এবং সম্ভাব্য বিজয়ীর নাম নিয়েও তর্ক জমে উঠে। উক্ত নির্বাচনী আলোচনাকে সামনে রেখে আগামী ফেব্রুয়ারী-২০২৬ সালে সম্ভাব্য অনুষ্টিতব্য জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রত্যাশায় ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে প্রচারণাকে জোরদার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা।
মনোনয়ন প্রত্যাশী ৭ প্রার্থীদের মধ্যে সিনিয়র রাজনীতিবিদ যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নের আটঘর নিবাসী আলহাজ এম এ মালেক খান। স্বৈরাচার আওয়ামী অবৈধ সরকারের আমলে মিথ্যা ষড়যন্ত্র মামলায় হয়রানির শিকার ত্যাাগী বিএনপি নেতা মালেক খান। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শের সৈনিক হিসেবে তিনি আজ পর্যন্ত তৃণমূল বিএনপির নেতা কর্মীদের দুঃখে সুখে পাশে রয়েছেন। রাজনৈতিক জীবনে আলহাজ্ব এম এ মালেক খান ১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতেগড়া সংগঠন সিলেট জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ছিলেন। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি, সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ মাতৃকার সংগ্রামে ১৯৬৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বালাগঞ্জ থানা শাখার আহবায়ক এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত আলহাজ এম এ মালেক খান বি.এ অনার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) এম.এ (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রি অর্জন করে রাজনীতির সাথে অতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়েন। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নের আটঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিগত সময়ে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ২০০১ ও ২০১৮ সালে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেন। তিনি আগামী ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-০৩ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের উজানীগাঁও নিবাসী ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন প্রাচীন বিদ্যাপীঠ জয়কলস উজানীগাঁও রশিদিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে বিএসএস অনার্স সহ মাস্টারর্স ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি অনার্স ও বিশ্ব বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার হিসেবে ঘোষিত হন। সিলেট সরকারি এম.সি কলেজ হোস্টেল শাখার সভাপতি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এস এম হল শাখার সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্ববায়ক কমিটির সদস্য এবং পরবর্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক হিসাবে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে তাহার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম যুক্তরাজ্য শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘আমার দেশ’ অফিস থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি ২০২৫ সালের শুরুতেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রার্থীতা ঘোষণা করেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য নাদের আহমদ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৮৩ সালে ছাত্রদলের সদস্য হিসাবে বিএনপি’র রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি ১৯৮৪ সালে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক,১৯৮৬ সালে সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯০ সালে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মনোনীত হন। তিনি ১৯৯৩ সালে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ও ১৯৯৭ সালে দপ্তর সম্পাদক এবং ২০০৫ সালে জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০১-২০০৬ সালে তৎকালীন জাতীয় সংসদের হুইপ ফজলুল হক আসপিয়ার এপিএস হিসাবে দায়িত্ব পালন সহ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নতুন উপজেলা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে কারানির্যাতিত নেতা শিক্ষা জীবনে আইন বিষয়ে বি.এ, এলএলবি সম্পন্ন করেন।
জগন্নাথপুর উপজেলার হলদিপুর ইউনিয়নের চিলাউড়া গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমানে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সভাপতি এম এ সাত্তার। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি প্রান্তরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপি’র তিনবারের সাধারণ সম্পাদক প্রবাসী কয়ছর এম আহমেদ। জগন্নাথপুর পৌরসভার ইকড়ছই গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী কয়ছর এম আহমেদ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-০৩ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সূদুর লন্ডন হইতে বাংলাদেশে এসে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণ সংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর পৌরসভার
ইশহাকপুর নিবাসী যুক্তরাজ্য প্রবাসী এম এ কাহার। গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা অর্জনকারী এম এ কাহার রাজনৈতিক জীবনে ১৯৭৯ সালে ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যুক্তরাজ্য সুইন্ডন শাখার সাবেক সভাপতি মনোনীত হন। তিনি সুনামগঞ্জ ০৩ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা কাজ করছেন।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনী প্রচারণায় থাকা মেজর (অবঃ) আশফাক শামী। তিনি একজন প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা। জগন্নাথপুর উপজেলার শাহারপাড়া-সৈয়দপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী মেজর (অবঃ) আশফাক শামী সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনী প্রচারণায় আলোচনায় স্থান করে নিয়েছেন।
১৯৮৪ সালে সৃষ্ট জাতীয় সংসদের ৩০০ টি আসনের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার ৫ টি আসনের এই আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ১৯৯৬ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে গোলজার আহমদ ও ২০০৫ সালে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ মৃত্যুবরণ করলে উপ-নির্বাচনে এই আসনে বাংলাদেশ জমিয়ত মনোনীত জোটপ্রার্থী মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১ তম সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া আমলাতান্ত্রিক কর্মজীবন শেষে
মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হন। এবার এই আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র হেভিয়েট ৪ প্রার্থী রয়েছেন। গোপনসূত্রে জানা যায়,প্রার্থী বাছাইকে সামনে রেখে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র তিনবারের সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদের দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে ৪ প্রার্থী জোটবদ্ধ হন। জোটবদ্ধ দুই উপজেলার ৪ প্রার্থী ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন, নাদের আহমেদ,এম এ কাহার ও মেজর আশফাক শামী একত্মতায় একে-অপরকে সহযোগিতার আশ্বাসে জোটবদ্ধ হয়ে নিজেদের প্রচারণায় মাঠে স্থান করে নিয়েছেন।