দিরাই প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই, শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর এই তিন উপজেলার মিলনস্থল চন্ডিডহর। দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের মানুষ নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে আসছেন। নদীর ওপর স্থায়ী সেতু না থাকায় বর্ষাকালে নৌকা হয়ে উঠেছে লাখো মানুষের একমাত্র ভরসা।
এই দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ও প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচলের সুবিধার্থে চন্ডিডহরে স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর ২ঘটিকায় এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
দিরাই’র চন্ডিডহর হোসেনপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় ডাউকি নদীর পাড়ে আয়োজিত এই মানববন্ধনে তিন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ— প্রবীণ, তরুণ, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রবাসীরা একত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ করে জগদল, দরগাপাশা ও কলকলি ইউনিয়নের হাজারো মানুষ এতে যোগ দিয়ে ঐক্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
এদিন জনস্রোতে মুখর ছিল চন্ডিডহর এলাকা। দুপুর গড়ানোর আগেই চন্ডিডহর এলাকায় নেমে আসে জনতার ঢল। হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে একটাই দাবি— “চন্ডিডহরে সেতু চাই, এখনই চাই। তিন উপজেলার শত শত শিক্ষার্থী স্লোগান দিতে দিতে অংশ নেয়— “অঙ্গীকার নয়, বাস্তবায়ন চাই”, “ভোগান্তি নয়, চাই স্থায়ী সমাধান”, “জনগণের দাবি— সেতু নির্মাণ হোক এখনই।”
বক্তব্যে উঠে আসে জনমানুষের প্রাণের দাবি মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- সাবেক সংসদ সদস্য শাহিনুর পাশা, জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশীদ লাভলু, ডা. মামুনুর রশিদ, এমদাদুল হক আরকান, শিক্ষক প্রতিনিধি সজ্জাদ আলী, আমিরুল ইসলাম, ইসমে আজম শিহাব, মিজানুর রহমান মিজান, ইউপি সদস্য নূর আলম ও লায়েক আহমেদ, সমাজসেবক শাহিনুর পাশা ও শাহ আজিজ, প্রবাসী শিমুল চৌধুরী, আব্দুল হালিম এবং তরুণ সংগঠক সালে আহমেদ খান কুতুব।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন মুফতি সিরাজুল ইসলাম ও মকবুল হোসেন।
বক্তারা বলেন, “চন্ডিডহরে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। এই সেতুটি হলে তিন উপজেলার মানুষ সরাসরি যোগাযোগের সুবিধা পাবে, কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে।”
তারা আরও বলেন, “প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নদী পারাপারে জীবন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। বর্ষার সময় নৌকা ডুবে দুর্ঘটনাও ঘটে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারে না, কৃষক তাদের পণ্য বাজারে নিতে পারে না। এই সেতুটি নির্মাণ হলে শুধু তিন উপজেলা নয়, পুরো সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।”
বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “চন্ডিডহর সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি জনজীবনের অপরিহার্য বাস্তব চাহিদা। অবিলম্বে স্থায়ী সেতু নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
স্থানীয় কৃষক নূরুল ইসলাম বলেন, “বর্ষা এলেই আমরা আতঙ্কে থাকি। নৌকা না চললে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো যায় না, বাজারে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। একটি সেতু হলে আমাদের কষ্ট অনেক কমবে।”
কলেজ শিক্ষার্থী সুমি আক্তার বলেন, “প্রতিদিন নদী পার হয়ে কলেজে যেতে ভয় লাগে। অনেক সময় নৌকায় জায়গা না পেলে ক্লাস মিস করতে হয়। আমাদের নিরাপত্তার জন্যই সেতু দরকার।”
উন্নয়নের নতুন দিগন্ত খুলবে সেতুটি স্থানীয়দের মতে, চন্ডিডহর সেতু নির্মাণ হলে দিরাই, শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর—এই তিন উপজেলার মধ্যে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে, নতুন বাজার গড়ে উঠবে, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য হবে। বিশেষ করে জগদল, দরগাপাশা ও কলকলি ইউনিয়নের হাজারো মানুষ এতে সরাসরি উপকৃত হবেন।
এছাড়া প্রবাসীরাও এলাকায় বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই হাওরাঞ্চলে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
বক্তারা আর বলেন, “আমরা রাজনীতি নয়, উন্নয়ন চাই। জনগণের দাবিকে সম্মান জানিয়ে চন্ডিডহর সেতু দ্রুত বাস্তবায়ন হোক— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
মানববন্ধনের সমাপ্তি ও পরবর্তী কর্মসূচি মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহণকারীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করে এলাকা প্রদক্ষিণ করেন এবং পরে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেন।
তিন উপজেলার জনগণ আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সরকার এই অঞ্চলের জনদুর্ভোগ বিবেচনা করে দ্রুত চন্ডিডহরে স্থায়ী সেতু নির্মাণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।