শাহ্ ফুজায়েল আহমদ,বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ, পাইলগাঁও—এই দুই ইউনিয়ন ও জগন্নাথপুর পৌরসভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের হাওর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়নকে সামনে রেখে সারাদিনব্যাপী উন্মুক্ত গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বরকত উল্লাহ’র সভাপতিত্বে বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত এসব গণশুনানিতে স্বচ্ছতা ও শতভাগ জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জোরালো দাবি তুলেছেন কৃষক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের মানুষ।
রানীগঞ্জে গণশুনানি আলোচনা
দিনের শুরুতে রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আয়োজিত প্রথম গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন রানীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ছদরুল ইসলাম, ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক হাজী চান মিয়া, সমাজসেবক নুরুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ইছরাক আলী, ইউপি সদস্য কাউছার তালুকদার, জাকির হোসেনসহ বহু কৃষক প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।
বক্তারা বলেন, হাওর অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই। তারা অভিযোগ করেন—বাঁধ নির্মাণে সামান্যতম অনিয়মই হাজারো কৃষকের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে কঠোর মনিটরিং, কাজের মান বজায় রাখা এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার দাবি জানান তারা।
পাইলগাঁও ও পৌরসভায় গণশুনানি
বেলা ২টায় পাইলগাঁও ইউনিয়নের কাতিয়া বাজারে দ্বিতীয় গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বাদ মাগরিব জগন্নাথপুর পৌরসভা প্রাঙ্গণে শেষ সভাটি বসে, যার প্রতিটিতেই সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বরকত উল্লাহ।
জগন্নাথপুর পৌরসভায় অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে বক্তব্য রাখেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র শফিকুল হক, পৌর প্রকৌশলী সতীশ গোস্বামী, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর প্রেসক্লাব সভাপতি তাজউদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক শাহ্ ফুজায়েল আহমদ, কৃষক ও ট্রাকশাখার সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম, কৃষক নেতা ফারুক আহমদ, আনকার মিয়া, শ্রমিক নেতা মাসুদ মিয়াসহ অনেকে।
উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহরাব হোসেন, পাউবো’র উপসহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান কানন, উপজেলা উপসহকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাইফ উদ্দিন খান, সাংবাদিক আমিনুল হক শিপন, ট্রাক শাখা সভাপতি ও কৃষক জাহেদ আলী, ট্রাক্টর মালিক সালামত আলী, এনামুল হক, শ্রমিক ফারুক মিয়া, সালাহউদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা।
কৃষকদের আশ্বস্ত করলেন
কর্মকর্তারা গণশুনানিতে আসা সব অভিযোগ ও মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন—
“এবার আর কোনো অনিয়ম নয়! কৃষকের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে পরিকল্পিতভাবে মানসম্পন্ন ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে।”
তারা জানান, মাঠপর্যায়ে নিয়মিত তদারকি, প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে জনসম্পৃক্ততা ও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হবে।
দিনব্যাপী তিনটি স্থানের এই গুরুত্বপূর্ণ গণশুনানিকে হাওর এলাকার কৃষকদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও জীবিকা রক্ষায় অত্যন্ত ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।