জগদল(দিরাই) প্রতিনিধি :
ছবিতে দেখা নদীটি সুনামগঞ্জের অন্যতম মরা হেরাচাপ্টি নদী। যা স্থানীয়দের কাছে মরা হেরাচাপ্টি নদী হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘের এই নদীটি উপজেলা সদরের কালনী নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে হেরাচাপ্টি নদীর সাথে মিলিত হয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলার মাহাসিং নদীতে মিশেছে।
এক সময়ের খরস্রোতা নদীটি এখন বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। হয়েছে গো-চরণ ভুমি,খেলার মাঠ। উজান থেকে আসা পলিতে ভরাট হয়ে গেছে নদীর তল দেশ। শুষ্ক মওসুমে যে নদীতে বড় বড় লঞ্চ চলাচল করেছে।
যে নদী পার হতে নৌকার প্রয়োজন হতো সেই নদীর বিভিন্ন স্থানে এখন পাঁয়ে হেটে পার হন স্থানীরা। এই চিত্র শুধু মরা হেরাচাপ্টির নয়। উপজেলার চামটি,কালনী,মাহাসিংসহ প্রায় সকল নদী ভরাটের কবলে পড়ে হারিয়েছে তার বৈচিত্র্য। নদীর এমন চিত্র জানান দেয় ভালো নেই নদী ও হাওর পাড়ের মানুষ ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে দিরাই উপজেলায় ছোটবড় নদী রয়েছে প্রায় ৬টি। রয়েছে কয়েক শত খাল। তথ্য অনুযায়ী উপজেলার প্রায় সকল নদীই ভরাটের কবলে পড়লেও সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের তালিকায় হেরাচাপ্টি ও চামটি নদী। উজানের ঢলের সাথে আসা পলিতে ভরাট হয়ে গেছে এসব নদীর তল দেশ। প্রতি বছরই পরিবর্তন হচ্ছে নদীর আকৃতি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবেশবাদীদের মতে নদী ভরাটের প্রধান কারণ হলো নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টির ফলে নদীর তলদেশে পলি সঞ্চিত হওয়া এবং বিভিন্ন প্রকাশের দূষণ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, হাওর অঞ্চলে অপরিকল্পিত বাঁধ ও অবকাঠামো নির্মাণ, নদী দখল, দূষণ ও নদী ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ সংরক্ষণ না হওয়া নদী ভরাটের অন্যতম কারণ। ফলে শুষ্ক মওসুমে নদনদীতে নৌ চলাচল বাঁধাগ্রস্তসহ হাওরে জীবন জীবিকায় দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রভাব।
দেখা দিয়েছে কৃষি কাজে সেচের পানির সংকট। স্থানীয় বাজার গুলোতে ব্যাবসায়ীরা আছেন মহা সমস্যায়,আর এই নৌপথ বন্ধ থাকার কারনে হেমন্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্যের দাম হয় আকাশ ছোয়াঁ।
ব্যাহত হচ্ছে মাছের প্রজণন। ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে সুপেয় পানি সরবরাহ। বেড়েছে বন্যার প্রাদুর্ভাবসহ পরিবেশের বিপর্যয়। বর্ষা ও শুষ্ক মওসুমে নদীগুলো খনন করে নাব্যতা রক্ষা করা, পরিকল্পিত ও পরিবেশ উপযোগীভাবে বাঁধ ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার পাশাপাশি নদী রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
নদনদী ভরাটের ফল। যা হাওরবাসীর জন্য অশণি সংকেত। নদী ভরাটের ফলে সুনামগঞ্জ সহ দিরাই ও নেত্রকোনা জেলায় প্রতিবছর বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। নদী ভরাটের স্থায়ী কুফল থেকে বাঁচতে এখনই মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে স্থায়িভাবে পরিকল্পিত ড্রেজিং প্রয়োজন। নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
পাহাড় থেকে যে পলি আসে তা বের না হলে তা অন্যান্য নদীতে যাবে। বৃহৎ প্রকল্পের আওতায় নদী খনন প্রয়োজন। অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। নদী শাসন ও রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ আইন প্রয়োগ করা জরুরী বলে জানান পরিবেশবাদীরা।